সিমবিয়ান হ্যাকিং -এর প্রথম পর্বে আমি দেখিয়েছিলাম কিভাবে Jaf এ সাহায্যে CFW অর্থাৎ কাষ্টম ফার্মওয়্যার দিয়ে ফোন ফ্লাস করতে হয়। এই পর্বেও আমি ওই একই পদ্ধতি অনুসরণ করব তবে পার্থক্য শুধু ফার্মওয়্যারের। অর্থাৎ এই পর্বে আমরা OFW অর্থাৎ অরিজিনাল ফার্মওয়্যার দিয়ে ফোন ফ্লাস করব।
আর সবচেষে মজার ব্যাপারটি হল শুধুমাত্র সিমবিয়ানই নয় নোকিয়ার BB5 এর সকল সেট এই পদ্ধতিতে ফ্লাস দেয়া যাবে। আসুন জেনে নেয়া যাক BB5 কি?
BB5 কি?
BB মানে BaseBand, আর 5 বোঝাচ্ছে ৫ম প্রজন্ম (5th Generation)। বর্তমানে নোকিয়ার প্রতিটি ফোনই এই ৫ম প্রজন্মের প্রযুক্তির দ্বারা তৈরী হচ্ছে। এই প্রজন্মের প্রযুক্তি দিয়ে তৈরীকৃত ফোনগুলি খুব আকর্ষনীয় হয়। আর এই ফোনগুলির চাহিদা ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। এই প্রজন্মের ফোনগুলিকে USB দিয়ে ফ্লাস করা যায়।BB5 চেনার উপায়
BB5 চেনার সহজ একটি উৎস হল উইকিপিয়া। আপনারা উইকিপিডিয়া থেকেই জানতে পারবেন আপনার ফোনটি কোন জেনারেশনের। এপর্যন্ত তৈরী সকল নোকিয়া ফোনের লিষ্ট এবং Generation দেখতে এখানে ক্লিক করুন। এখানে ফোনগুলির লিষ্টের তালিকা থেকে Generation অংশ থেকে দেখতে পারবেন কোন সেটটি কোন Generation এর।সিমবিয়ান ব্যবহারকারীরা লক্ষ্য করুন-
আপনি যদি সিমবিয়ান ব্যবহারকারী হন আর আপনার ফোন যদি ডেড না হয়ে থাকে বা চালু থাকে তাহলে ফার্মওয়্যার ইন্সটল অর্থাৎ ফ্লাস দেওয়ার আগে আপনার ফোনটিকে একবার হার্ড রিসেট করে দেখতে পারেন। কারণ অনেক ছোটখাট সমস্যা আছে যেগুলি ফ্লাস না দিয়ে ফোন হার্ড রিসেট করলেই ঠিক হয়ে যেতে পারে।ফোন হার্ড রিসেট কিভাবে করতে হয় জানতে এখানে ক্লিক করুন।
হার্ড রিসেট করার পর দেখুন আপনার সমস্যাগুলি গেছে কিনা। যদি সমস্যা না থাকে তাহলে আর ফোন ফ্লাসের দরকার নেই। আর যদি সমস্যা থেকেই যায় তাহলে ফ্লাসিং ছাড়া উপায় নেই।অরিজিনাল ফার্মওয়্যার ডাউনলোডঃ
অরিজিনাল ফার্মওয়্যার ডাউনলোড অত্যান্ত সহজ। এর জন্য অবশ্য ধন্যবাদ দিতে হয় “সিমবিয়ান টয়” কে। এদের তৈরীকৃত NaviFirm+ নামক একটি সফটওয়্যারের সাহায্যে খুব সহজেই অরিজিনাল ফার্মওয়্যার ডাউনলোড করা যায়।NaviFirm ডাউনলোডঃ
Windows 8Windows Vista ও 7
Windows XP
বিঃদ্রঃ Windows XP ব্যবহারকারীদের কম্পিউটারে .NET Framework 4 ইন্সটল করা থাকতে হবে। .NET Framework 4 ডাউনলোড করা যাবে এখানে ক্লিক করে।
ফার্মওয়্যার ডাউনলোডঃ
NaviFirm+ ডাউনলোড শেষে রাইট বাটন ক্লিক করে ফাইলটি Extract করুন। এবং NaviFirmPlus.exe ফাইলটি ওপেন করুন।- Products থেকে আপনার ফোনের মডেল এবং RM অনুয়ায়ী সিলেক্ট করুন (১)
- Releases থেকে যে ভার্সনটি দিয়ে ফ্লাস করতে চান সেটি সিলেক্ট করুন (২)
- Variants থেকে নিচে আপনার ফোনের Product Code লিখুন। ( ফোনের প্রডাক্ট কোড জানতে ব্যাটারি খুলে স্টিকারটিতে দেখুন ) (৩)
- উপরে ফিল্টারকরা ফার্মওয়্যারটিতে ক্লিক করুন (৪)
- সবশেষে Download এ ক্লিক করুন (৫)
- সব ফাইলগুলি ডাউনলোড হয়ে গেলে Fw ফোল্ডারটিতে ফাইলগুলিকে পাবেন।
অরিজিনাল ফার্মওয়্যার (OFW) দিয়ে ফোন ফ্লাসিং
শুরুর আগে প্রয়োজনীয় ফাইলগুলি নিচের লিংকগুলি থেকে ডাউনলোড করে নিন-- ১। Nokia PC Suite বা Nokia Ovi Suite (যেকোন একটি)
- ২। Jaf With PKey Emulator
- ৩। Dot Net Framework (শুধুমাত্র Windows XP ব্যবহারকারীদের জন্য)
নোটঃ নোকিয়া
পিসি/ওভি সুইট দিয়ে আপনার ফোনটি ব্যাকআপ করে রাখুন। কারণ ফ্লাস দিলে
আপনার ফোনে সেভ করা নম্বর (সিমে নয়) এবং ম্যাসেজগুলি মুছে যাবে। যদি
প্রয়োজন না থাকে তাহলে ব্যাকআপ নাও নিতে পারেন। তবে আপনার ফোনটির ড্রাইভার
কম্পিউটারে ইন্সটল করার জন্য আপনাকে অবশ্যই নোকিয়া পিসি সুইট বা অভি সুইট
আপনার পিসিতে ইন্সটল করতে হবে। নাহলে JAF সফটওয়্যারটি দিয়ে আপনার ফোন
ফ্লাসের সময় এটি আপনার ফোন ডিটেক্ট করতে পারবে না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য- ফ্লাস করতে গিয়ে কেউ ঠিকমত করতে পারায় যদি কারো ফোন ডেড হয়ে যায় তাহলে লেখক কোনভাবেই দায়ী থাকবে না। তাই নিজ দ্বায়িত্বে ফ্লাস করুন। তবে জেনে রাখা ভাল “ফোন ডেড হলে সেটি একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়না পূণরায় সঠিকভাবে ফ্লাস দিলে ফোন ভাল হয়ে যায়”।
ফ্লাসিং-
১। ডাউনলোডকৃত ফাইলগুলি আপনার RM অনুযায়ী
” RM-XXX ” একটি ফোল্ডারে ফাইলগুলি রাখুন। উদাহরণ হিসেবে আমার নোকিয়া
5530 XM এর RM মডেল 504 হওয়ায় আমি RM-504 নামের একটা ফোল্ডার তৈরী করেছি।
এবং তাতে আমার ফাইলগুলি রেখেছি।
২। এবার আপনার তৈরীকৃত ” RM-XXX ” নামের
ফোল্ডারটি ” C:\Program Files\Nokia\Phoenix\Products ” লোকেশনে কপি করুন। (
64 বিট ইউজাররা ” C:\Program Files (x86)\Nokia\phoenix\products ”
ফোল্ডারে কপি করুন) [আমার ফোনের RM-504 হওয়ার আমি ” RM-504 ” ফোল্ডারটি
কপি করেছি]
নোটঃ C:\Program
Files\Nokia\ লোকেশনে গিয়ে আপনাকে ম্যানুয়ালী Phoenix এবং ওর ভেতর আবার
Products ফোল্ডারটি তৈরী করে নিতে হবে তারপর সেখানে আপনার RM-XXX ফোল্ডারটি
কপি করতে হবে।
৩। ” Jaf With PKey Emulator ” নামের
ফাইলটি ডাউনলোডের পর এক্সট্রাক্ট করুন। এরপর “jaf setup.exe” ফাইলটিতে ডাবল
ক্লিক করে সফটওয়্যারটি আপনার কম্পিউটারে ইন্সটল করে নিন। ইন্সটল শেষে
“jaf_nok4models” ফোল্ডারটিতে গিয়ে “jaf_nok4models.ini” ফাইলটি ”
C:\Program Files\ODEON\JAF ” ফোল্ডারটিতে কপি করুন। (যারা 64 বিট অপারেটিং
সিস্টেম ব্যবহার করেন তারা ” C:\Program Files (x86)\ODEON\JAF ” ফোল্ডারে
কপি করুন)।
এবার আশা যাক মূল কাজে-
৪। আপনি যদি Windows 7 বা 8 ব্যবহারকারী হন তাহলে এই ধাপটি অনুসরণ করুন। উইনডোজ সেভেন বা এইট ব্যবহারকারী না হলে ৫ নম্বর ধাপটি দেখুন।- ডাউনলোডকৃত J.A.F.With.P-Key.Emulator.By.Saiful ফোল্ডারটিতে যান এবং “jaf pkey emulator.exe” ফাইলটিতে রাইট বাটন ক্লিক করে “Properties” এ গিয়ে “Compatibility” ট্যাবটিকে ক্লিক করুন।
- এরপর নিচের স্কিনশর্টটি অনুসরণ করে Compatibility mode থেকে Windows Vista অথবা Windows XP (Service Pack 3) সিলেক্ট করুন।
- এবং Privilege level এ Run this program as an administrator অপশনটিকে টিক দিন।
- সবশেষে OK তে ক্লিক করুন।
৫। J.A.F.With.P-Key.Emulator.By.Saiful ফোল্ডারটি থেকে “jaf pkey emulator.exe” এ ডাবল ক্লিক করে রান করুন। এবং নিচের স্কিনশর্টটির মত অপশনগুলি চেক করে নিয়ে GO তে ক্লিক করুন।
৬। একটি ইরোর দেখাবে। ভয়ের কোন কারণ নাই। OK তে ক্লিক করুন।
৭। এখন JAF সফটওয়্যারটি চালু হবে। এরপর BB5 ট্যাবটিতে ক্লিক করুন। এবং নিচের স্কিনশর্টটির মত Manual Flash, Dead USB, Normal Mode এবং Use INI অপশনগুলিতে টিক চিহ্ন দিন। আর ” CRT 308 ” থেকে টিক চিহ্নটি উঠিয়ে দিন।
৮। এখন একটি ডায়লক বক্স আসবে। আপনার ফোনের RM দেখে মডেল সিলেক্ট করুন OK তে ক্লিক করুন। ( বিঃদ্রঃ এই লিষ্টে যদি আপনার ফোনের মডেল/RM খুজে না পান তাহলে এখানে ক্লিক করে জেনে নিন কিভাবে ফোনের মডেল যুক্ত করতে হয় )
১০। সবকিছু ঠিক থাকলে নিচের স্কিনশর্টের মত MCU, PPM, CNT, APE Variant এর নীল বাতিগুলির যেকোন তিনটি অথবা চারটিই জ্বলে উঠবে। আমার ফোনের ক্ষেত্রে তিনটি জ্বলেছে
উপরের স্কিনশর্টটির মার্ক করা জায়গাগুলি লক্ষ্য করুন। আপনার ফ্লাস ফাইলগুলি উপরের মত পেয়েছে কিনা চেক করে নিন।
এখন আপনার ফোনটি বন্ধ করুন এবং USB ক্যাবলের সাহায্যে কম্পিউটারে সংযুক্ত করুন।
নোটঃ আপনার কম্পিউটার থেকে Nokia PC/OVI/Nokia Suite বন্ধ (Exit) করে দিন। আপনার স্টাটাস বারের ডানদিক থেকে নোকিয়া পিসি/ওভি সুইট/নোকিয়া সুইট এর আইকোনটিতে রাইট বাটন ক্লিক করে Exit করে দিন।
১১। সবশেষে JAF থেকে Flash বাটনে ক্লিক করুন। একটা ওয়ার্নিং মেসেজ দিবে Yes করুন।
এরপর আপনার ফোনের পাওয়ার বাটনটি ১ সেকেন্ডের জন্য চেপে ধরে ছেড়ে দিন। শুধুমাত্র ১ সেকেন্ট; এর থেকে বেশি যেন না হয়। নাহলে আপনার ফোনটি চালু হয়ে যাবে।
নোটঃ প্রথম প্রথম ইরোর ম্যাসেজ পেতে পারেন। যেমনঃ Phone Not Found… বা Error reading phone init data… এইরকম কোন ইরোর পেলে ১১ নম্বর ধাপটি পূণরায় সম্পন্ন করুন।
১২। JAF আপনার ফোন ডিটেক্ট করতে পারলেই ফোন ফ্লাসিং শুরু হয়ে যাবে। কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন। ফ্লাসিং শেষ হলে আপনার ফোন অটোমেটিক চালু হয়ে যাবে।
ব্যাস আপনার ফোন ফ্লাসিং কমপ্লিট !
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
ফ্লাসিং এ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জন বিভিন্ন প্রকার ইরোর ম্যাসেজের সম্মুক্ষিণ হতে পারেন। তবে এরজন্য একদম মন খারাপ করা চলবে না। পূণরায় চেষ্টা করে দেখতে হবে। আমি নিচে কয়েকটি ইরোর ম্যাসেজ সহ এগুলার সমাধান দিলাম। আমি নিজেও এই ইরোরগুলির সম্মুক্ষিণ হয়েছিলাম।- CMD 17 Block – এইরকম কোন ম্যাসেজ দিয়ে ফ্লাসিং বন্ধ হয়ে গেলে আপনার ডেটা ক্যাবলের পোর্টটি অন্য একটি পোর্টে লাগান। সবচেয়ে ভাল হয় যদি আপনি আপনার ডেটা ক্যাবলটি পিসির পিছনের USB পোর্টগুলিতে লাগান। পোর্ট চেন্স করার পরও এই ম্যাসেজ দেখালে ফোনটির ব্যাটারি ৫মিনিট খুলে রাখুন। পূণরায় চালু করে ফ্লাসিং এর চেষ্টা করুন।
- Pooling Phone… – এইরকম কোন ম্যাসেজ দিয়ে ফ্লাসিং বন্ধ হয়ে গেলে বুঝতে হবে আপনার ফ্লাসিং ফাইলগুলিতে কোন সমস্যা আছে। অন্য ফ্লাসিং ফাইল ডাউনলোড করে পূণরায় ফ্লাস দেওয়ার চেষ্টা করুন।
- Phone failed to boot in flash mode CMT… – আপনার ফোনের হার্ডওয়্যার প্রব্লেম থাকতে পারে। অন্য ফার্মওয়্যার দিয়েও ফ্লাস দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
- Error reading phone init data… – এরকম সমস্যায় আপনার ক্যাবলটি কম্পিউটারে অন্য পোর্টে লাগিয়ে দেখতে পারেন। সবচেয়ে ভা হয় যদি আপনি আপনার কম্পিউটারের পেছনের USB পোর্টগুলি ব্যবহার করেন। পোর্ট চেন্স করার পরও এই ম্যাসেজ দেখালে ফোনটির ব্যাটারি ৫মিনিট খুলে রাখুন। পূণরায় চালু করে ফ্লাসিং এর চেষ্টা করুন।
——————————————————–
ভাল থাকুন
সুস্থ থাকুন।
সুস্থ থাকুন।
সৌজন্যঃ ব্লগার নিশাত